আর যেখানে এই থালি পাওয়া যায় তাকে বলে বাসা।
ভাত, ডাল, সবজি। সঙ্গে ঘি মাখানো রুটি। পেঁয়াজ, আচার। কখনো রুটির জায়গায় কুলচা, তন্দুরি অথবা রুমালি রুটি ও পাওয়া যায়। সঙ্গে চাইলে মটর পনির বা পালঙ পনির। সবকিছুই কিন্তু নিরামিষ।
এই খাবারটার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় কিন্তু রাজস্থানে নয় আসামে। গৌহাটিতে। তখন ছোটখাটো একটা খুব চাকরি করতাম। সারাদিনের যে খাবার খরচ বরাদ্দ ছিল তাতে বাধ্য হয়ে সস্তার খাবার খুঁজতেই হতো। সেই খোজা থেকেই প্রথম মারওয়ারি থালির সন্ধান পাই।
গরম গরম খাবার দেয়। ফলে খেতে মন্দ লাগে না। সঙ্গে আরও একটা বিশেষ পদ থাকে যেটাকে বলে কড়ি। এটা কিন্তু মারোয়াড়ী দের একেবারে নিজস্ব খাবার। বস্তুটা হল ডালের বড়ার তরকারি। কিন্তু আমরা যেভাবে ডালের বড়া খাই আর ওদের এই কড়ি দুটো র স্বাদ কিন্তু বেশ আলাদা। ভেতরে কিছু একটা দেওয়া থাকে যার ফলে ওদের এই কড়ির তরকারিতে একটু টক টক স্বাদ হয়। আর সঙ্গে সরষে দেয় ওরা। ঝোল ঝোল তরকারি। বেশ ভালোই লাগে খেতে।
পরে এই থালি আমি ভারতের আরো নানা শহরে খেয়েছি। প্রায় সর্বত্রই কিন্তু সেই সব শহরের ওই মারোয়ারি বাসাতে বসে এই খাবার খেয়েছি। মাড়োয়ারি মানুষ ভারতের প্রায় সব শহরেই রয়েছেন। ফলে তাঁদের নিজেদের খাবার জায়গা এই বাসাও প্রায় সর্বত্রই রয়েছে।মারওয়ারি বাসা মানে হলো অনেকটা আমাদের বাঙালি পাইস হোটেলের মত। মধ্যবিত্ত মানুষের খাবার জায়গা। পরিচ্ছন্ন সুস্বাদু অথচ সস্তা। বেশিরভাগই পেট চুক্তিতে খাওয়া। অর্থাৎ যত ইচ্ছে খান দাম একই। সঙ্গে আবার বেশিরভাগ জায়গাতেই টক দই দেওয়া হয়। অথবা লাড্ডু।
এই প্রথম চোখে পড়ল আমার বর্তমান কাজের জায়গা সল্টলেক সেক্টর ফাইভ এর অফিস পাড়াতেও একটি মারওয়ারি বাসা রয়েছে। এতদিন সল্টলেক যাচ্ছি, কোনদিন খেয়াল করিনি। দেখলাম সেখানে থালিও পাওয়া যাচ্ছে।
একদিন টুক করে লাঞ্চের সময় খেতে গেলাম। খাবার খুব একটা খারাপ নয় তবে খুব সস্তাও নয় কিন্তু। নিচের ছবিতে যে খাবার গুলো দেয়া রয়েছে তার দাম পড়ল ১০০ টাকা। আমি সঙ্গে আরেকটি মিসিরুটি নিয়েছিলাম আলাদা করে। তার জন্য আরও অতিরিক্ত কুড়ি টাকা দিতে হল। সবচেয়ে বড় কথা এখানে কিন্তু পেট চুক্তিতে খাওয়া নয়। বেশি খাবার নিলে অতিরিক্ত দাম দিতে হবে। তবে একটা ব্যাপার এসি রেস্টুরেন্ট। পরিবেশের জন্য কিছুটা দাম হয়তো বেশি লাগছে। তবে কড়ির তরকারি নেই, দই বা মিষ্টি নিতে হলে আলাদা দাম দিতে হবে।
কলকাতা নানারকম মানুষের নানা রকম সংস্কৃতির মিলন স্থান। পারলে একদিন এই খাবারটা টেস্ট করবেন। খারাপ লাগবে না এটা বলতে পারি।
***
লিখেছেন: অনিন্দ্য রুদ্র/ফেবু প্রোফাইল থেকে সংগৃহীত